কলেজ পরিচিতি
কলেজ পরিচিতি

নোয়াখালী জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চৌমুহনী সরকারি সালেহ আহমেদ কলেজ। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্র নোয়াখালীর চৌমুহনীতে কলেজটির অবস্থান। সবুজ ক্যাম্পাস সমৃদ্ধ এই কলেজটি বাবু ক্ষেত্র নাথ দালালের নেতৃত্বে বাবু প্রসন্ন কুমার রায় চৌধুরী এবং তাঁর জ্ঞাতি ভাই হর কুমার সাহার দানকৃত ১ বিঘা জমির উপর ১৯৪৩ খ্রি. চৌমুহনী কলেজ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বাবু রাধা গোবিন্দ নাথ।

 

সূচনা লগ্ন থেকে আলোকিত সব শিক্ষকরা এই প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকতা করে গেছেন। বর্তমানেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেধাবী শিক্ষকরা এখানে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভবে। পঁচাত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলে অবিরাম শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে।

 

তবে কলেজটির পথ চলা কখনোই খুব মসৃন ছিল না। ১৯৪৬ সালে নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে কলেজের মূল উদ্যোক্তা, অধ্যক্ষ, অধ্যাপকসহ অনেকেই দেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। ফলে কলেজটি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কলেজটি আবার চালু হয়। এ সময় বাবু মুকুন্দ মোহন চক্রবর্তী কিছু দিন অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এর পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান টি. হোসাইন নামে খ্যাত কিংবদন্তী অধ্যক্ষ জনাব তোফাজ্জল হোসাইন। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান এবং এক টানা ৩১ বছর তিনি কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

মাত্র এক বিঘা জমি নিয়ে যে কলেজটির যাত্রা শুরু হয়েছিল, খরিদ এবং দান সূত্রে বর্তমানে সেই কলেজটির ভূমির পরিমাণ প্রায় ৩৫ একর। খোদ বাড়ির পূর্বপুরুষ এবং এ অঞ্চলের অনেক সাধারণ মানুষের দানে কলেজটি এই সম্পদের অধিকারী হয়েছে। তবে এই অর্জনের ক্ষেত্রে যার অবদান সব চেয়ে বেশি তিনি হচ্ছেন কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ জনাব তোফাজ্জল হোসাইন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হওয়া ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ সালেহ আহমেদ এর নাম অনুসারে কলেজটির নতুন নামকরণ করা হয় চৌমুহনী এস. এ কলেজ।

 

০১/১১/১৯৮৪ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। ফলে নতুন নামকরণ করা হয় চৌমুহনী সরকারী এস. এ কলেজ। বর্তমানে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক কলেজটির নামকরণ করা হয়েছে চৌমুহনী সরকারি সালেহ আহমেদ কলেজ,  বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী। মুক্তিযোদ্ধা সালেহ আহমেদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবেই বর্তমান সরকার তাঁর পূর্ণনাম

লেখার নির্দেশনা প্রদান করেছেন।  

 

২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবারের মত মোট ৮টি বিষয়ে কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু হয়। বিষয় গুলো হলো- হিসাববিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইসলামি শিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞানও গণিত। ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে বাংলা এবং ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষে রসায়ন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু হয়। বর্তমানে এখানে মোট ১৩টি বিষয়ে অনার্স এবং ২টি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। শিক্ষকের পদ রয়েছে ৮৬টি। বৃহত্তর নোয়াখালীর আলোকবর্তিকা চৌমুহনী সরকারি সালেহ আহমেদ কলেজ। এই এলাকার প্রাণের স্পন্দন। আপন আলোয় আলোকিত এক অনন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধনই যে প্রতিষ্ঠানটির চিরায়ত ধর্ম।


14.03.2017 Admin
© 2024 চৌমুহনী সরকারি সালেহ আহমেদ কলেজ, নোয়াখালী | Technical Assistance by: explore IT